পরিচালক

পরিচালক

বাংলাদেশে বর্তমানে বেকারত্ব একটি বৃহৎ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বেকার নামটি শুনলেই কেমন জানি গা শিউরে উঠে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)-এর এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশে বেকারের সংখ্যা ৩ কোটি। প্রতিষ্ঠানটি আভাস দিয়েছে, কয়েক বছরে তা দ্বিগুণ হয়ে ৬ কোটিতে দাঁড়াবে, যা মোট জনসংখ্যার ৩৯.৪০ শতাংশ হবে। আমাদের এই স্বাধীন দেশের কয়েকটি সমস্যার মধ্যে অন্যতম বড় একটা সমস্যা হলো বেকারত্ব। দেশের একাডেমিক শিক্ষার সর্বোচ্চ সনদ নিয়েও বছরের পর বছর পার করে দিচ্ছে শিক্ষার্থী, কিন্তু মিলছে না কোন চাকরি। চাকরিতে সীমিত পদের জন্য হাজার হাজার আবেদন পড়ে। এত আবেদনকারীর মাঝে নিজেকে অসহায় লাগে। এমন পরিস্থিতিতে চাকরি না পেয়ে দুশ্চিন্তায় কুরে কুরে খায় অগণিত যুবককে।  বেকার জীবন মানে হতাশায় দিন যাপন করা। পরিবার বন্ধু-বান্ধব আত্মীয়-স্বজন এর কাছে অবহেলার পাত্র হয়ে উঠা। বেকারত্বের ফলে ডিপ্রেশনের চলে যাচ্ছে লাখো বেকার যুবক-যুবতী। উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েও চাকরি না পেয়ে মনে হয় জন্ম টাই বৃথা। প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থী ডিগ্রি অর্জন করলেও পাচ্ছে না শিক্ষার মান অনুযায়ী চাকরি। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা একজন শিক্ষার্থীকে একদিকে চাকরি দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। অন্যদিকে পারছে না উদ্দোক্তা তৈরি করতে। বাজারে যে ধরনের চাকরি রয়েছে, সেই ধরনের দক্ষ শিক্ষার্থী আমরা তৈরি করতে পারছি না। ফলে, পড়াশুনা শেষ করে চাকরির জন্য আবার নতুন করে পড়াশুনা করতে হচ্ছে।

 

কীভাবে এটার সমাধান হবে ?

শিক্ষার্থীদের জন্য কর্মমুখী শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থা বা হাতে কলমে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা চালু করতে হবে।আমাদেরকে ভুলে গেলে চলবে না যে- বর্তমান যুগ বিজ্ঞানের যুগ, কারিগরি জ্ঞানের যুগ। আর এই কারিগরি জ্ঞানই বেকারত্বের অভিশাপ থেকে দেশকে যেমনি মুক্ত করতে পারে, তেমনি দেশের অর্থনৈতিক অবস্থাও দ্রুত পাল্টে দিতে সক্ষম। এমন এক অস্বস্তিকর অবস্থার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চালু করেছে এক বছর মেয়াদি অ্যাভান্সড সার্টিফিকেট ইন ফাইন আর্টস্ (চারুকলা) কোর্স। এই কোর্সটি দক্ষ জনবল সৃষ্টিতে এক অবিস্মরণীয় অবদান রাখতে পারে। দেশে-বিদেশে চারুকলায় দক্ষ বিপুল সংখ্যক জনবলের চাহিদা রয়েছে । এ কোর্সটি সম্পন্ন করার পর চাকরি হবেই হবে। কেউ বেকার থাকবেনা।

বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক চালুকৃত এমন এমন একটি ফলপ্রসূ শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের জন্য চারুকলা, স্বাস্থ্য ও শারীরিক শিক্ষা ইনস্টিটিউট সামান্য হলেও অবদান রাখতে পারছে বলে আমাদের বিশ্বাস। আমরা আরও বিশ্বাস করি যে, চারুকলা, স্বাস্থ্য ও শারীরিক শিক্ষা ইনস্টিটিউট-এ ভর্তি হলে শিক্ষার্থীরা ভাল ফলাফল করে জীবনকে আরও সুন্দর ও উজ্জ্বল করতে সমর্থ হবে । কর্ম ছাড়া মুক্তি নাই, কারিগরি শিক্ষার বিকল্প নাই।

চারুকলার শিক্ষার্থীরা যেসকল বিষয়ে বাস্তব প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে পারবে:

(০১) বেসিক ডিজাইন,(০২) গ্রাফিক্স ডিজাইন,(০৩) ড্রইং,(০৪) স্কেচ,(০৫) মডেলিং, (০৬) পরিপ্রেক্ষিত,(০৭) রং এর ব্যবহার, (০৮) জ্যামিতিক চিত্র অঙ্কন,(০৯) পেইন্টিং, (১০) ছাপচিত্র, (১১) সাইনবোর্ড, ব্যানার, বিভিন্ন প্রচারপত্র, হ্যান্ডবিল, পোস্টার ইত্যাদি তৈরি; (১২) ব্যাগ, টি-শার্ট, গেন্জি, বস্তা, মগ, ক্যালেন্ডার, জন্মদিন, বিয়ে, হালখাতা, আমন্ত্রণপত্র ইত্যাদি ডিজাইন এবং ডিজিটাল ও স্ক্রিন প্রিন্ট করা,  (১৩) হাতের লেখা সুন্দর বা স্টাইলিস করা, (১৪) কারুশিল্প ( বাঁশ, বেত, পাট, পুঁথি, ভ্যানিটি ব্যাগ, ফেলনা জিনিস দিয়ে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস) তৈরি করা।

চারুকলার কর্মক্ষেত্র/চাকরি:

(০১)  সরকারি, বে-সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, এনজিও, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসায়  শিক্ষক হিসেবে চাকরির অপূর্ব সুযোগ,

(০২) আর্ট শিল্প ফ্যাক্টরীতে,

(০৩) ফিল্প নির্মাণে প্রডিউচার/পরিচালক হিসেবে,

(০৪) ফ্যাশন ডিজাইন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোতে,

(০৫) স্থাপত্য, টেক্সটাইল, সিরামিক ডিজাইনার হিসেবে, 

(০৬) ইনটেরিওর ও এক্সটেরিওর ডিজাইনার হিসেবে,

(০৭) কম্পিউটার প্রোগ্রামার হিসেবে,

(০৮) কালার কম্বিনেশন, নঁকশা কাজ তৈরিতে,

(০৯) পত্রিকা, বেতার, টেলিভিশনে অলংকরণ ও কার্টুনিস্ট হিসেবে,

(১০) ফটোগ্রাফি ও শিল্পকলা একাডেমিতে,

(১১) মানচিত্র তৈরি প্রতিষ্ঠানে,

(১২) আউটসোর্সিং/ ফ্রিল্যান্সার হিসেবে,

(১৩) নিজেই স্বনির্ভর প্রতিষ্ঠান গড়ার সুযোগ ।

আসুন জেনে নেয়া যাক-

কর্মমুখী শিক্ষা বাস্তবায়ন করতে হবে। একজন যুবককে শুধু শিক্ষিত হলে হবে না, তাকে হাতে-কলমে কাজ শিখতে হবে। কার্যকরী শিক্ষা দিতে হবে।

চাকরির অপেক্ষা না করে যুবকদের স্বল্প পুঁজি নিয়ে হলেও উদ্যোক্তা হতে হবে। পরনির্ভরশীল না হয়ে আত্মনির্ভরশীল হতে হবে। মনোবল বা আত্মবিশ্বাস বাড়াতে হবে।

নিজের উদ্যোগকে ছোট করে দেখা যাবে না। মনে রাখতে হবে ‘বিন্দু বিন্দু করেই মহাসিন্ধুর জন্ম। পাছে লোকে উপহাস করবে তাতে কান দেয়া যাবে না।

শিল্পনির্ভর কাজ করতে হবে। যুবকদের যোগ্যতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রযুক্তিনির্ভর কর্মদক্ষতা বাড়াতে হবে।

একদা একলোক সক্রেটিসকে প্রশ্ন করেছিল, সাফল্য কিভাবে পাওয়া যায়? তখন তিনি লোকটিকে নিয়ে নদীতে গেলেন। তারপর পানিতে লোকটিকে ডুবিয়ে হাত দিয়ে চেপে ধরে রাখলেন। লোকটি নিশ্বাস নেওয়ার জন্য ছটফট করতে লাগলো। লোকটি যখন মৃতপ্রায় তখন তিনি ছাড়লেন। জিজ্ঞেস করেন, তুমি এতক্ষন কি চেয়ে ছিলে? বলল- বাতাস। সক্রেটিস তখন বললেন, সাফল্যও ঠিক এভাবেই চাইতে হবে। আপনার প্রবল ইচ্ছা শক্তি ও সে অনুযায়ী পড়াশোনাই আপনাকে গন্তব্যে পৌঁছে দিবে। এ থেকে মুক্তির একমাত্র পথ সৎসাহস, ধৈর্য, নিষ্ঠা ও প্রবল ইচ্ছা শক্তি। পরিশেষে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে। কোনো কাজকে ছোট করে দেখলে হবে না। নিজের কাজের প্রতি যত্নবান, শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। বেকার বলে কখনোই হতাশ হবেন না। আশেপাশের মানুষের কথায়ও কর্নপাত করবেন না। সৃষ্টিকর্তার উপর ভরসা রেখে পড়াশোনা চালিয়ে যান। পড়াশোনা শেষ করে অথবা পড়াশোনার পাশাপাশি একজন উদ্যোক্তা হওয়ার চেষ্টা করা উচিত। ইনশাল্লাহ একদিন সফলতা মনি কোঠায় পৌঁছানো সম্ভব হবে।

সকলকে ধন্যবাদ।